ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

জাল সনদে নিয়োগ পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজ

ডেস্ক নিউজ ::
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা জাল সনদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এ বিষয়ে গভর্নিং বডির কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়লেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আর তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার একাধিক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ বেশ পুরনো।

তিনি বোর্ডিয়ের অর্থও আত্মসাৎ করত। বোর্ডিংয়ে অনুদান হিসেবে আসা ছাগল বাজারে বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিত। ভালো চাল বাসায় নিয়ে বাজার থেকে পচা চাল কিনে বোর্ডিংয়ে দিত।

রাফি হত্যার ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি সরেজমিন গিয়ে এসব তথ্য পেয়েছে।

এদিকে রাফি হত্যার তদন্ত গুছিয়ে এনেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতিমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনসহ ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর মধ্যে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী শাহাদাত হোসেন শামীমসহ ৮ জন ঘটনার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অনেক আসামি ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। তদন্ত শেষ করে শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে।

পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সিরাজ অভিজ্ঞতার সনদ জাল করে সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পায়। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে কমপক্ষে দশ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। অথচ তার সেই অভিজ্ঞতা ছিল না।

সে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রংমালা মাদ্রাসা ও ফেনী সদর উপজেলার দৌলতপুরের ছালামতিয়া দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়ে সোনাগাজীতে নিয়োগ পায়।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানায়, বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ শুধু নিজেই অভিজ্ঞতার জাল সনদ নেয়নি, অর্থের বিনিময়ে অন্যদেরও সে জাল সনদ দিত।

পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, সরেজমিন গিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজের অনেক অপকর্মের তথ্য আমরা পেয়েছি। শিগগিরই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। কয়েকজন তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।

অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি। এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে সে কারাগারে আছে।

পাঠকের মতামত: